
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “অপরিচিতা” একটি কালজয়ী ছোটগল্প যা বাঙালি সাহিত্যজগতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই গল্পে তিনি নারী-পুরুষ সম্পর্ক, সমাজের প্রচলিত ধারণা, এবং আত্মসম্মানের জটিল বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন। যারা জানতে চান অপরিচিতা গল্পের মূল কথা, তাদের জন্য এটি একটি দিকনির্দেশক আলোচনা হতে পারে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনুপম একজন শিক্ষিত, ভদ্র ও মধ্যবিত্ত যুবক, যার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় কিরণময়ী নামের এক আধুনিক, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীনচেতা তরুণীর সঙ্গে। বিয়ের আলোচনাও শুরু হয়, কিন্তু বিয়ের দিন সকালে অনুপম তার মা ও আত্মীয়দের কথায় প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবং বিয়ে ভেঙে দেয়। পরে সে বুঝতে পারে কিরণময়ী ছিলেন একজন সম্মানিত ও চরিত্রবান নারী এবং বিয়ে না করাটা ছিল তার জীবনের একটি বড় ভুল।
এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ নারীর আত্মমর্যাদা ও সচেতনতার চিত্র এক অসাধারণ দৃষ্টিতে তুলে ধরেছেন। কিরণময়ী চরিত্রটি শুধুই একটি প্রেমিকার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং একজন প্রগতিশীল নারীর প্রতীক, যিনি নিজেকে অবজ্ঞা সহ্য করেন না এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতা রুখে দাঁড়ানোর সাহস রাখেন।
গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয়, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যের প্ররোচনায় নিজের সঠিক সিদ্ধান্ত ভুলে গেলে জীবনে পরে অনুশোচনার মুখোমুখি হতে হয়। একই সঙ্গে, নারীর সম্মান, তার অবস্থান ও আত্মসম্মানের প্রশ্নকে কীভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা উপলব্ধি করানো এই গল্পের অন্যতম বার্তা।
সবশেষে বলা যায়, অপরিচিতা গল্পের মূল কথা হলো আত্মসম্মান ও স্বাধীন চিন্তার প্রাধান্য। এটি একটি গল্প হলেও বর্তমান সমাজেও এর প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করা যায় না। তাই “অপরিচিতা” শুধু একটি সাহিত্যের টেক্সট নয়, এটি আমাদের মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্ন করার একটি আয়না।